ভূমিকা ও সম্পাদনায় ড. শিশুতোষ সামন্ত ও ডা. দুলালকৃষ্ণ দাস
গ্রন্থকার শ্রীধনঞ্জয় দাশ মজুমদার হিন্দু শাস্ত্র ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ে একজন প্রাজ্ঞব্যক্তি। তিনি হিন্দু শাস্ত্রোক্ত ভারতের ঐতিহাসিক তথ্যের অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য বহুকাল যাবত ভারতের যে সকল স্থানে বাংলার রাজপুত এবং গৌড়ব্রাহ্মণগণ মগধের বাঙালী সম্রাটগণের শক্তি বৃদ্ধির জন্য অনন্ত সামন্তচক্র গঠন করিয়াছিলেন, সেই সকল স্থানের বহু জায়গায় অনুসন্ধান ও গবেষণা করিয়া তথ্য সংগ্রহ করেন। আবার মুসলমান অভিযান কালে বাংলার যে যে সামন্তচক্র ধ্বংস বা মুসলমান অধিকৃত হইয়াছিল, তাহার রাজধানীগুলির ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করিয়াও বহু তথ্য সংগ্রহ করিয়া এই 'ভারত ও ভারতের বাহিরে বাঙালীর অবদান' গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। বঙ্গ সরকারের প্রত্নতত্ত্ববিভাগ বাংলার পান্ডুরাজার ঢিবি প্রভৃতি স্থান খনন করিয়া যে সাড়ে পাঁচ হাজার বৎসরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করিয়াছেন, এই গ্রন্থখানিতে সেই সভ্যতার পরিচয় পাওয়া যাইতেছে।
প্রাচীন বাংলার বাঙালীগণ সঙ্ঘবদ্ধতা, কর্মতৎপরতা এবং প্রতিভা বলে সমগ্র ভারতে আধিপত্য স্থাপন করিয়া কিরূপে ভারতের বাহিরে আধিপত্য স্থাপন করিয়াছিলেন এই 'ভারত ও ভারতের বাহিরে বাঙালীর অবদান' গ্রন্থে তাহার পরিচয় দেওয়া হইয়াছে। আবার মুসলমান অভিযানকালে এই জাতির দুর্নীতি দুর্মতির জন্য এই জাতির ধ্বংসের পূর্বে কিরূপে ছিন্ন ভিন্ন ও পরস্পর হিংসাপরায়ণ হইয়া এই দেশকে বিদেশীর পাদমূলে বিক্রয় করিয়াছিল, তাহারও পরিচয় দেওয়া হইয়াছে। গ্রন্থখানির পাণ্ডুলিপি পড়িয়া আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হইয়া মনে করি যে এইরূপ গ্রন্থের অত্যন্ত অধিক প্রয়োজন আছে। ভারতের স্বাধীনতার পরে সর্বত্রই আত্মস্বার্থের ও বিলাসিতার জন্য দুর্নীতি এবং উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলিয়া দিতেছে। এইরূপ ধ্বংসের মুখ হইতে জাতিকে রক্ষার জন্য আমাদের জাতির অতীত ধ্বংসের কারণ প্রদর্শন করাই এই পুস্তক প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য।